মাছের পুকুরের পানি শোধন (পাঠ ৪)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - কৃষিশিক্ষা - কৃষি প্রযুক্তি | NCTB BOOK
1.6k

পুকুরে মাছ চাষ অতি পরিচিত কৃষি প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তির সফল ব্যবহার তখনই সম্ভব যখন পুকুরের পরিবেশ মাছের জন্য স্বাস্থ্যকর এবং বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়। পুকুরের পরিবেশ বলতে জলজ আগাছামুক্ত স্বাদু পানিবিশিষ্ট পুকুরকে বোঝায়। পুকুর থেকে মাছের ভালো উৎপাদন পেতে হলে পুকুরের পরিবেশ তথা পানির গুণাগুণ রক্ষা করা খুবই জরুরি।

নানা কারণে পুকুরের পানি দূষিত হতে পারে। আর পানি দূষিত হলেই এতে অক্সিজেনের অভাব ঘটে এবং পানিতে বিষক্রিয়া দেখা দেয়। রোগ-জীবাণুরও প্রাদুর্ভাব ঘটে। ফলে মাছ মারা যায়, কৃষক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং পরিবেশও দূষিত হয়। কাজেই মাছকে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহের জন্য এবং বিষক্রিয়া ও অন্যান্য রোগ-জীবাণু থেকে বাঁচানোর জন্য পুকুরের পানি শোধন করা দরকার। নিচে পুকুরের পানির গুণাগুণ নষ্ট হওয়ার কারণ ও শোধন পদ্ধতি আলোচনা করা হলো।

১। দ্রবীভূত অক্সিজেনের অভাব: দ্রবীভূত অক্সিজেনের অভাব পুকুরের একটি সাধারণ সমস্যা। সকালে বা বিকালে অথবা দিনের যেকোনো সময়ে, মেঘলা দিনে এবং কোনো কোনো সময় বৃষ্টির পর পুকুরের পানিতে অক্সিজেনের অভাব ঘটে। এর সুস্পষ্ট লক্ষণ হলো অক্সিজেনের অভাবে মাছ পানির উপর ভেসে খাবি খায় ও ক্লান্ত হয়ে পানির উপরিভাগে ঘোরাফেরা করে। অক্সিজেনের বেশি অভাব হলে মাছ মরতে শুরু করে। এসময় কৃষকের ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দেয়। পুকুরে অক্সিজেনের অভাব ঘটলে নিচে উল্লিখিত প্রযুক্তি গ্রহণ করে সুফল পাওয়া যায়।

ক) পুকুরে সাঁতার কেটে অক্সিজেনের অভাব দূর করা: পুকুরের পানি খুবই শান্ত থাকে। এক স্থানের পানি অন্য স্থানে সঞ্চালিত হয় না। ফলে পানিতে অক্সিজেন দ্রবীভূত হয় না। এই অবস্থায় পুকুরে সাঁতার কাটার ব্যবস্থা করলে অক্সিজেনের অভাব থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। সাঁতার কাটার জন্য কিশোর-কিশোরীদের পুকুরে নামিয়ে দেওয়া যায়।

খ) বাঁশ দ্বারা পুকুরের পানিতে আঘাত করা: বাঁশ দ্বারা পুকুরের শান্ত পানিতে আঘাত করলে পানিতে তোলপাড় হয় ও ঢেউ উৎপন্ন হয়। ফলে পানিতে বাতাসের অক্সিজেন দ্রবীভূত হয় ও সমস্যা দূর হয়। ক্রমাগত বাঁশ দিয়ে আঘাত করে পুকুরের এক পাড় থেকে অন্য পাড় পর্যন্ত পৌছালে সুফল পাওয়া যায়।

২। পুকুরের পানি ঘোলা হওয়া : বিভিন্ন কারণে পুকুরের পানি ঘোলা হয়। ক্ষুদ্র মাটির কণা পুকুরের পানি ঘোলা করে। আবার পুকুরের পাড় ধুয়ে বৃষ্টির পানি প্রবেশ করেও পানি ঘোলা হয়। ক্রমাগত কয়েকদিন বৃষ্টি হলে চতুর্দিক থেকে বৃষ্টির পানি পুকুরে প্রবেশ করে এবং পানি অধিক ঘোলা হয়।
পুকুরের ঘোলা পানি শোধনের জন্য নিচের প্রযুক্তি গ্রহণ করা যায়-
ক) শতক প্রতি ১-২ কেজি চুন প্রয়োগ করে ঘোলা পানি থিতিয়ে স্বাভাবিক করা যায়।
খ) শতক প্রতি পুকুরের পানির ৩০ সেমি গভীরতার জন্য ২৪০ গ্রাম ফিটকিরি প্রয়োগ করে ঘোলা পানি থিতানো যায়।
গ) সবচেয়ে সহজ প্রযুক্তি হলো শতক প্রতি ১২ কেজি খড় পুকুরের পানিতে রাখা।

৩। পুকুরের পানির অম্লত্ব ও ক্ষারত্ব : পুকুরের পানির পি এইচ মান নির্ণয় করে অম্লত্ব বা ক্ষারত্বের মাত্রা বোঝা যায়। পি এইচ মিটারের সাহায্যে এটি নির্ণয় করা হয়। পি এইচ মান ৭ এর কম হলে পানি অম্লীয় হয় এবং এর বেশি হলে ক্ষারীয় হয়। পুকুরের পানিতে অম্লত্ব বা ক্ষারত্বের গ্রহণযোগ্য মাত্রা হলো ৬.৫ থেকে ৮.৫। অম্লত্ব বা ক্ষারত্ব গ্রহণযোগ্য মাত্রার কম-বেশি হলে মাছ চাষে সমস্যার সৃষ্টি হয়। যেমন কম হলে মাছের ফুলকায় পচন ধরে আর বেশি হলে মাছের খাদ্য চাহিদা কমে যায় এবং মাছ দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে মাছ সহজেই রোগাক্রান্ত হয়। পুকুরের পানির অম্লত্ব বা ক্ষারত্ব স্বাভাবিক মাত্রায় আনার জন্য নিচের পদ্ধতিসমূহ প্রয়োগ করা যায়।

ক) চুন প্রয়োগ: অম্লত্ব বেড়ে গেলে শতক প্রতি ১-২ কেজি চুন প্রয়োগ করতে হবে।
খ) তেঁতুল বা সাজনা গাছের ডাল ব্যবহার : ক্ষারত্বের মাত্রা বেড়ে গেলে পুকুরের পানিতে ৩-৪ দিন তেঁতুল বা সাজনা গাছের ডাল ভিজিয়ে রাখা যায়।

৪। পানির উপর সবুজ শেওলার স্তর : পুকুরের পানিতে সবুজ শেওলার স্তর পড়েও পানির গুণাগুণ নষ্ট হয়। এতে পানির রং ঘন সবুজ হয়। ফলে মাছের স্বাভাবিক চলাফেরায় ব্যাঘাত ঘটে। শেওলা পচে পানিতে অক্সিজেনের অভাব ঘটে। অতঃপর মাছ পানির উপরিভাগে খাবি খায়। পানির এই অবস্থা থেকে বাঁচার জন্য নিচে উল্লিখিত পদ্ধতিসমূহ ব্যবহার করা যেতে পারে।

ক) তুঁতে বা কপার সালফেট প্রয়োগ: শতক প্রতি ১২-১৫ গ্রাম তুঁতে বা কপার সালফেট প্রয়োগ করা।

খ) চুন প্রয়োগ: শতক প্রতি ১ কেজি চুন প্রয়োগ করেও সুফল পাওয়া যায়।

কাজ: গ্রামের পুকুরগুলো ঘুরে দেখ। আর দেখ কীভাবে পুকুরের পানি দূষিত হচ্ছে। দূষিত পুকুরের মাছগুলো বাঁচাবার জন্য কৃষকেরা কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন তা দেখ এবং লেখ।

নতুন শব্দ: অক্সিজেন, পানি শোধন, ঘোলা পানি থিতানো, ফিটকিরি

Content added By
Promotion
NEW SATT AI এখন আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

Are you sure to start over?

Loading...